Raju Ahmed Boni
“মাদ্রাসার “কালেকশন” বিষয়ক ফতুয়া!!”
বাংলাদেশের কতিপয় “হুজুর কেবলা” মাঠে নেমেছেন শিক্ষার বিনিময়ে
“সন্মানি/ বেতন / মাইনে/ পারিশ্রমিক / মুজুরি“
নেওয়া ইসলাম বৈধতা দেয় কি না!”?
বিস্তারিত মন্তব্য লিখেছেন
জনৈক আলেমে দ্বীন!
“মাদরাসার বেতন বিষয়ে সাদ কান্ধলভির বক্তব্য সংক্রান্ত দেওবন্দের ফতোয়া পড়লাম। নিজের খানিকটা পূর্বধারণার অবসান হয়েছে, নতুন প্রশ্নও জেগেছে।”
শিক্ষকদের মুখে আমরা বরাবর শুনে এসেছি, মাদরাসায় পড়িয়ে বা দীন শিক্ষা দিয়ে “অর্থ” নেওয়া বৈধ বটে। নিতান্ত নিরুপায় হওয়ায়, মানে অন্য কোনও কাজে সময় বের করা মুশকিল বিধায় এই বৈধতা। আর এখন যেহেতু ‘বাইতুল মাল’ নেই, তাই খরচ জোগাতে জনসাধারণ থেকে চাঁদা বা কালেকশন করা হয়।
ফলে আমাদের মনে গেঁথে ছিল যে, অন্য কোনও উপায় থাকলে দীন শিক্ষা দিয়ে বা দীনের খেদমত করে অর্থ না–নেওয়াই ভালো।
তা ছাড়া হাদিসে এমন ঘটনার উদ্ধৃতিও পাই, “যেখানে কোনও সাহাবি কাউকে আয়াত শিখিয়ে তার থেকে একটা তীর আনলে তাকে “জাহান্নামের তীর” বলা হয়েছে।“কোরআনের ‘তাশতারু বিআয়াতি সামানান কলিলা” ও বলে যে, বিনিময়ে নেওয়াটা বরং আরও মুশকিলের।
একই সঙ্গে আমরা যখন শুনতাম, দেওবন্দের মশহুর শিক্ষক মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি (রহ.) এবং তার মতো খ্যাতিমান আলেমগণের অনেকে মাদরাসা থেকে নেওয়া তাদের বেতন একসময় পাই পাই হিসাব করে ফিরিয়ে দিয়েছেন—তখন উপর্যুক্ত ধারণাটি আরও বেশি পোক্ত হয়েছিল। আমাদের শিক্ষকগণ এ–কারণে মাদরাসায় পড়ানোকে ‘পরিশ্রম’ বলতেও নারাজ ছিলেন, যেন তাদের শ্রমিকের মতো ‘পারিশ্রমিক’ নেওয়া না লাগে। বরং তারা বলতেন ‘খেদমত’ এবং মাইনেকে বলতেন ‘অজিফা’—‘বেতন’ বলাও পছন্দ করতেন না।
কিন্তু দেওবন্দের এই ফতোয়া থেকে বোঝা যায় যে, দীন শিক্ষার বিনিময়ে বা দীনি খেদমতের বিনিময়ে অর্থ নেওয়া কেবল বৈধ নয়, বরং উত্তম।
এমনকি না নেওয়া মাকরুহ। উপরন্তু কেউ যদি নিজের জীবিকা নির্বাহের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকায় বেতন নিতে না চান, সেটাও বরং আল্লাহর রসুল (স.) বারণ করেছেন । সুতরাং নেওয়াটা জরুরি। এমনকি এই আয়ের ওপর সন্দেহ করাও ‘মূর্খতা‘।
তো প্রশ্ন হলো—যদি এই ফতোয়া অনুসারে ব্যবসার চেয়েও যদি দীনি খেদমত থেকে প্রাপ্ত অর্থ ‘বেশি পবিত্র’ হয় কেন পালনপুরি তার বেতন হিসাব করে জমা দিলেন?
নাকি এই ঘটনা সঠিক নয়?
পরবর্তী সময়ে তিনি তো ব্যবসা করেই আয় করেছেন। তুলনামূলক কম উত্তম আয়ের পথ রেখে তিনি কেন উত্তম আয়ের অর্থ ফেরত দিতে যান? যদি দান করার ইচ্ছা হয় তাহলে তিনি অন্য কোন অভাবী মাদ্রাসাকে দান করতে পারতেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো—‘বাইতুল মাল’ যেহেতু নাই,
বাইতুল মালের স্থলে জনগণের দান ধরা হয়েছে, সেটা অমুসলিম রাষ্ট্রে ঠিক আছে।
কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রে বর্তমান সময়ে জনগণের দান না–নিয়ে রাষ্ট্রীয় বেতন নেওয়া বেশি সমীচীন কি না? যেহেতু রাষ্ট্রের কোষাগারে ইচ্ছায়–অনিচ্ছায় আমাদের করের অর্থ জমা হয়ই। তো সেই অর্থ দীনি খাতে খরচ হওয়াটা আরও বেশি উপযুক্ত কি না? পলিটিক্যাল প্রভাবের ভয়ে রাষ্ট্রীয় বেতন না নেওয়া হলেও অন্তত শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ নেওয়াটা কেন অসঙ্গত মনে করা হচ্ছে?
পৃথিবীর মেজরিটি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা বিনামূল্যে হয় না। পে করতে হয়। স্কলারশিপ যারা পান, তারা ফ্রি নন। বরং যারা স্কলারশিপ দেন, তারাই শিক্ষার্থীর হয়ে অর্থ পরিশোধ করেন। মাদরাসায়ও (মাদানীনগরে আছে ) যারা খাবার ফ্রি পান,
তাদের অর্থ কর্তৃপক্ষ অন্য উপায়ে পরিশোধ করেন। অলরেডি এখন “প্রাইভেট ক্যাডেট” মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের থেকেটিউশন ফিস নেওয়াও হয় মোটা অঙ্কের!
এই কথাটা এজন্য বলতে হচ্ছে যে, ‘জনগণ’ মানে কিন্তু এইসব শিক্ষার্থীদেরই কেউ না কেউ। হয়তো অর্থটা শিক্ষার্থী নিজে দিচ্ছেন না, কিন্তু তার বাবা/ চাচা বা মামা কেউ মাদরাসাকে দিচ্ছেন।
তা ছাড়া আমাদের এ–অঞ্চলে ‘কালেকশন’র মাদরাসা–মসজিদ স্টাইলটি বলতে গেলে অনেকটা ভিক্ষাবৃত্তির মতোই—যা সম্মানজনক নয়।
সুতরাং মাদরাসা শিক্ষার বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার মতো হয় সরকারি বেতন বা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পদ্ধতি নিয়ে নিলেই তো এই জটিলতা আর থাকে না। তাতে বাধা কোথায়?
আশরাফ আলি থানভির রহ. উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “দীনি খেদমতে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সেবা করা সকল মুসলমানের উপর ওয়াজিব।”
প্রশ্ন হলো, তারা, মানে জনসাধারণ যদি ওয়াজিব পালন না করেন, কিংবা ওয়াজিবকে বর্তমানে ‘ভিক্ষাবৃত্তি’র পদ্ধতিতে জিইয়ে রাখেন, তাহলেও কি তাদের থেকে অর্থ নেওয়া জরুরি নাকি এমন হলে অর্থ না–নেওয়া উত্তম?
তখন বিকল্প পদ্ধতি কোনটি উত্তম? রাষ্ট্র নাকি জনগণ!!?
by
Raju Ahmed Boni
chief Editor
virtualjournalbd.com