১০২
ইউনুস সরকারকে মাঝেমধ্যে মনে হয় না অতিথি সরকার?কেমন সংকোচ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে,যেখানে প্রয়োজন ছিলো দায়িত্ব বুঝে নেয়া?
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা মাযার ভাঙা, লুটপাট,
গানের আয়োজন বন্ধ–
এমন ঘটনাগুলোতে শৈথিল্যের যে কোন লক্ষণ দেখা দিলে সেই সব শক্তিগুলো পেয়ে বসবে তিনটি গোষ্ঠী:
১. প্রতিবেশী হিসেবে যারা এই সরকারের অমঙ্গল চায়, এরা ব্যবহার করবে নেতিবাচক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে।
২. প্রথম গোষ্ঠীর কাজটা করে দিতে পারবে দেশের ভেতরে থেকেই এই দ্বিতীয় গোষ্ঠী। এরা ইসলামের একটা মারমুখী, পেটোয়া ভাবমূর্তি তৈরিকে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে, আওয়ামী লীগও যেমন একইভাবে ব্যবহার করতো বাঙালী জাতিয়তাবাদকে।
৩. নানান সংস্থা, যারা এই অস্থিরতার মূহুর্তগুলোকে ব্যবহার করে সরকারের ওপর তাদের প্রভাব শক্তিশালী করতে, নিজেদের তৎপরতার জাল বিস্তার করতে, এবং আদর্শ না, এই সব তৎপরতাই যে আসল শক্তি সেটাকে আবারও পুনপ্রতিষ্ঠা করতে। রাষ্ট্রের স্বার্থের চাইতে, বিপর্যযের চাইতে এদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি, সেই অর্থে এই সময়গুলো এদের উৎসব।
এত অস্থিরতার পরও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাতকে সরকার যখন অনেকটা সামাল দিয়েছে, ঠিক তখনই নতুন করে মাযারের ওপর হামলা হচ্ছে।
ফলে মনে রাখবেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষয়েও ঘটনা শেষ হয়নি। এই চেষ্টা তারা নানান ভাবে করতে থাকবে। এরা মনে করে, ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে আঘাত করতে থাকলে একটা না একটা ফাটল তৈরি হবেই।
এবং একটা বড়সড় সংঘাত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
গান, মাযার, বাউল হবে কুচকাওয়াজ, আসল আঘাত তারা সংখ্যালঘু প্রশ্নেই দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই সরকারকে ঢিল দেয়ার চেষ্টা করলে চলবে না, কারণ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়েই তারা বহর ভারী করে, সাহস সঞ্চয় করে।
ফলে, খুবই সাবধানে সামলাতে হবে সরকারকে।
এইসব উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাতথ্য কাজের, কিন্তু সেটা কাজটার সামান্য অংশমাত্র। আসল কাজ হলো কঠোর ভূমিকা নেয়া। মাযার কিংবা সংখ্যালঘু, যেখানেই হামলা হোক, চিহ্নিত করা, ব্যবস্থা নেয়া, দায়িত্বে থাকা প্রশাসনকে জবাবদিহিতায় আনা– এগুলো যদি না করতে পারেন, হোতাদের যদি বার্তা না দিতে পারেন, মনে রাখবেন, অর্থনীতি সামলাতে পারলেও খুব খারাপ ভাবে বিদায় নিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী এই বিষযে বাড়িয়ে প্রচার করা হচ্ছে, এটা সত্যি। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তেজনাকর, এটাও মিথ্যা নয়; যে কোন সুযোগ, যে কোন ছিদ্র দিয়ে এই টলায়মান ভারসাম্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা তারা করবে, এটা ভোলা চলবে না।
অতিথী সরকারের মত ভূমিকা পালন না করে পরিস্কার বার্তা দিন। এবং মুসলিম কিংবা হিন্দু, নির্বিশেষে কাউকেই প্রমাণের আগে গ্রেফতার, আটক এগুলো বন্ধ করে, খামোখা নিপীড়কের ভূমিকায় না গিয়ে ইতিমধ্যেই যে ঘটনাগুলো ঘটতে আমরা দেখেছি, সেখানে চিহ্নিতদের গ্রেফতার করুন, তদন্ত করুন। চুনোপুটিদের ধরুন, কিন্তু হোতাদের সামনে আনুন।
তিন বিপদের মাঝে দ্বিতীয়টাই বিপদজনক, একে ব্যবহার করে আসবে প্রথমটা। তৃতীয়টা যাকে বলে অনিবার্য ফলাফল।
ইসলামকে পুঁজি করে নারী হোক, সংখ্যালঘু হোক, তরিকাপন্থী হোক, বাউল হোক, গানের আয়োজন হোক, কাউকে নিপীড়ন করা চলবে না, এই বার্তা দিন, দেখবেন বিপুল মানুষ আপনাদের পাশে আছে।
সৈয়দ জামিল আহমেদ বিষয়েও এই প্রসঙ্গে বলে রাখি। আমি মনে করি, তিনিই যোগ্যতম লোক, শিল্পকলা তার হাতেই থাকা উচিত। মামুনুর রশীদকে ফোন করে তিনি কোন গুরুতর অন্যায় করেননি, একটা অনুরোধই করেছেন আপাতত সংঘাত এড়াতে। এটা কোন নাযায়েজ কাজ না, বরং নিরাপত্তার প্রশ্নটাকে বিবেচনা করেছেন।
মামুনুর রশীদ বরং ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে দেখাতে চেষ্টা করছেন সরকার নাটক সংস্কৃতি এই সব বন্ধ করে দিতে চায়! তিনি নিজে শিল্পকলায় একাধিক নাটক বন্ধের সময়ে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেনিই, সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।
এর আগে জামিল আহমেদের নাটক বন্ধ করা বিষয়ক ঘটনাতেও অপ্রপ্রচার শেষে ভিডিও যখন আসলো, আমরা দেখলাম নাটকটা চালাতে সৈয়দ জামিল কতটা তৎপর ছিলেন! এই ভূমিকা কোনদিন আমরা কোন সরকারের আমলে দেখিনি।
কিন্তু আসল কথা হলো, সৈয়দ জামিল আহমেদের এই বিব্রতকর দশার জন্য অধ্যাপক ইউনুসের অতিথী সরকার, কিংবা তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারাই দায়ী।
সরকারের প্রতি পরামর্শ হবে, জামিল আহমেকে দৃঢ় ভরসা দিন যে, শিল্পকলার নিরাপত্তা সরকার দেখবে। দেশে এবং বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় যা দরকার, সৈয়দ জামিল আহমেদ যেনো তা নির্ভয়ে করেন।
অতিথি হিসেবে আর থাকবেন না। অন্তবর্তীকালীন হলেও আপনারাই সরকার। তৌহিদি জনতার নামে বিভ্রান্ত হবেন না, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরাই শান্তি আনবার জন্য আপনাদের সমর্থক হবেন। আর হিন্দু সম্প্রদায়কে যদি আপনারা মুক্ত করতে পারেন আওয়ামী লীগের অভিশপ্তু জোয়াল থেকে, তারাও আপনাদের পাশে আসবেন।
নারায়নগঞ্জ কিংবা চট্টগ্রাম, দিনাজপুর বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দেশের সর্বত্র মানুষের ভালোবাসা পাবেন এই ভূমিকা নিলে।