৩৯
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য হালকা সাঁজোয়া যান কেনার ক্ষেত্রে তার এই স্বৈরাচারী মনোভাবেনেতৃত্বের ধরন বিবেচনায় জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়াকে নিঃসন্দেহে একজন স্বৈরাচারী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য হালকা সাঁজোয়া যান কেনার ক্ষেত্রে তার এই স্বৈরাচারী মনোভাবের কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর মেশিনগান এবং রিকয়েললেস রাইফেল বহনকারী সাধারণ জীপ গুলোকে হালকা সাঁজোয়া যানের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিন প্রকার সাঁজোয়া যানকে নির্বাচন করা হয় যা হল ফরাসি কোম্পানি প্যানহার্ড নির্মিত ভিবিএল মার্ক ২, তুরস্কের কোম্পানি অটোকার নির্মিত কোবরা এবং ইটালির কোম্পানি আইভেকো নির্মিত এল এম ভি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই যানবাহনগুলো ক্রয়ের চেষ্টা করা হলেও ফরাসি কোম্পানি প্যানহার্ড টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করায় কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জেনারেল সার্ভিস প্রকিউমেন্ট কনফারেন্স বা জিএসপিসির মাধ্যমে নেয়া হয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি বিশেষ জিএসপিসি মিটিং ডাকা হয়। সেই মিটিংয়ে ভিবিএল প্রস্তুতকারক ফরাসি কোম্পানি রেনল্ট ট্রাক ডিফেন্সের (আরটিডি) ৪ এবং ২১ আগস্টের প্রেরিত দুটি পত্রের কথা উল্লেখ করা হয় যার মাধ্যমে তারা কমপক্ষে ৫০ টি বা তার বেশি যানবাহন কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা এটাও জানায় যে ভিবিএল মার্ক২ এর উন্নত সংস্করণ নির্মাণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন।
উক্ত যানবাহন সমূহ ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎকালীন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ সিজিএস লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল এর সাথে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার মতানৈক্য দেখা দেয়। স্পেশাল জিএস পিসি মিটিং ২/২০১৪ এর মিনিটস অফ দা মিটিং এর খসড়ায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সিজিএস লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল নিম্নরুপ মন্তব্য প্রদান করেনঃ
” এটা সম্ভাব্য যে, যখন ভিবিএল মার্ক ২ সংস্কার শেষে একটি পূর্ণ কার্যকরী যান হিসেবে উৎপাদিত হবে তখন ফরাসি সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য দেশও এ ধরনের যানবাহন ক্রয়/ব্যবহার করবে। যদিও এ ধরনের হালকা সাঁজোয়া যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু এর চূড়ান্ত উৎপাদন সম্পাদিত হওয়ার আগে বর্তমান অর্থবছরে তাড়াহুড়ো করে এটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়”।
সিজিএস এর অনুরূপ মন্তব্যের পরেও উক্ত খসড়ার মন্তব্যপত্রে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া কোন প্রকার মন্তব্য না করে তৎকালীন ডিডাব্লিউ ই এন্ড এস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজ্জাককে অন্য একটি মন্তব্য পত্র তৈরি করে নিয়ে আসতে বলেন। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজ্জাক সম্পূর্ণ নতুন একটি মন্তব্য পত্র প্রস্তুত করে উপস্থাপন করেন। উক্ত মন্তব্য পত্রে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সিজিএসের মন্তব্যের স্থানটি কেটে তার নিচে নিজ হাতে সিএএস লিখে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখ দিয়ে অ্যাপ্রুভড হিসাবে স্বাক্ষর করেন অর্থাৎ তিনি জি এস পি সি মিটিং এর মিনিট যাতে হালকা সাঁজোয়া যানবাহন কেনার বিষয়টি উল্লেখ ছিল তা অনুমোদন করলেন। ব্রিগেডের জেনারেল রাজ্জাক ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সেনাপ্রধান অনুমোদিত নতুন মন্তব্য পত্র সিজিএসের নিকট উপস্থাপন করলে সিজিএস মইনুল তাতে লেখেন যে:
” আমি আশা করেছিলাম সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধান নোট ৩ এ প্রদত্ত আমার মতামত পর্যালোচনা করবেন এবং সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। আমি বিস্মিত। নোট ৩ এ যে বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে তা এখনো কার্যকর এবং প্রয়োজনীয়/প্রাজ্ঞ মনোযোগের দাবিদার”।
সিজিএস এর মন্তব্য কে অবজ্ঞা করে জিএসপিসি মিটিংয়ে একক ভাবে এতগুলি হালকা সাঁজোয়া যান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া শুধুমাত্র স্বৈরতান্ত্রিকতার পরিচয় দেননি বরং প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন।
উল্লেখ্য, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজ্জাক সেনাপ্রধানের প্রতি তার আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ অবসর গ্রহণের সময় মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।