৪৪
বাংলাদেশে বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের মূল কারণের বিশ্লেষণ:
১. বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি: বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদের হার ১৫-১৬%, যা অধিকাংশই চক্রবৃদ্ধি সুদ হিসেবে কার্যকর হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ১০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে, তাহলে ৪ বছরের মধ্যেই মূলধন ও সুদ মিলিয়ে ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়, এবং ১০ বছরে এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ কোটি টাকায় – ৪ গুণ! ফলে চক্রবৃদ্ধি ঋণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন।
২. আইনের শৃঙ্খলার অভাব: বর্তমান আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিচ্ছে। আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিনিয়োগের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
৩. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়িক সম্প্রদায় এখনও অস্থিতিশীল অনুভব করছে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগে তাদের অনাগ্রহ বাড়ছে।
৪. মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিকরা উচ্চ বেতনের জন্য যৌক্তিক আন্দোলন করছে, যা শিল্পখাতের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। মূল্যস্ফীতির কারণে ন্যূনতম মজুরি দিয়েও জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়ছে, এবং কৃষি উৎপাদন সক্ষমতা এবং যথার্থ সরবরাহের ব্যবস্থা না বাড়ালে ভবিষ্যতে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
৫. বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন: ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা প্রায় ৪০% কমে গেছে। যারা $১০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা শুধুমাত্র টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রায় $৪০ মিলিয়ন লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। এই ব্যাপক মুদ্রা পতন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে।
৬. নীরব অর্থনৈতিক মন্দা: COVID-পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ নীরব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না, সেখানে ব্যবসায়িক পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত বিলাসবহুল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে ক্রয়ক্ষমতার অভাবে ব্যবসায়িক পণ্য বিক্রিও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে।