২০৯
সাগর-রুনি হত্যার একযুগ!
‘সময় নেয়াই যেন তদন্ত কর্মকর্তার কাজ’ !
• ১০৫ বার সময় নিলেও শেষ হয়নি তদন্ত!
• থানা পুলিশের পর ডিবি,
এখন তদন্তে র্যাব!
• ১২ বছরে ‘সাত বার’ তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন!
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার-মেহেরুন রুনিকে
১২ বছর আগে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হয়েছিলেন।
আলোড়ন সৃষ্টি করা এই জোড়া খুনের পর
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
(former defence minister ,
late shahara khatun)
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে
খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আর ঘটনার পরের দিন ওই সময়ের আইজিপি বলেছিলেন,
‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
খুব তাড়াতাড়ি আমরা
এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য দিতে পারবো বলে আশা করছি।’
৪৮ ঘন্টার সেই নির্দেশনার ১২ বছর পার হচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারী সোমবার।
খুনি গ্রেপ্তার হয়নি,
দেশের এই দুই সাংবাদিক
কেনো খুন হলেন-তাও জানা গেল না এই এক যুগে।
‘তদন্তে প্রণিধান যোগ্য সেই অগ্রগতি’
আটকে আছে আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার সময় চাওয়ার আবেদনেই।
‘খুব তাড়াতাড়ি আমরা ইতিবাচক তথ্য দেওয়ার আশা’- এখন রূপ নিয়েছে মরীচিকায়।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক ছিলেন সাগর সরওয়ার
এবং
তার স্ত্রী রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মিহির সারওয়ার মেঘ।
তখন তার বয়স ছিল ৫ বছর,
এখন ১৭ বছরের উঠতি তরুণ সে।
কিন্তু বাসার ভেতর বাবা-মাকে কেনো খুন হতে হলো,
আজো সেই প্রশ্নের জবাব পায়নি শিশু থেকে কৈশোর পার হয়ে তারুণ্যে পা দেওয়া মেঘও।
থানা পুলিশ থেকে ডিবি,
এরপর আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর মামলারটির তদন্ত করছে র্যাব।
তদন্তের ফল আলোতে না আসলেও
বারবারই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালতের কাছে সময় নিচ্ছেন কর্মকর্তা।
সেই সময়ও বাড়ানো হয়েছে এ পর্যন্ত ১০৫ বার!
এমন পরিস্থিতিতে সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি
ধামাচাপা দিতে সময় নেয়ার নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে কি-না,
সেই প্রশ্নও তুলেছেন সাংবাদিক
আদালতের কাছ থেকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য
বার বার সময় নেয়াই তদন্ত কর্মকর্তার কাজ বলে মন্তব্য করেছেন
মামলার বাদি ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান।
এর বাইরে অন্য কোনো কাজ করছে না বলে মনে করেন তিনি।
তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে নওশের আলম বলেন,
মামলাটি ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
তদন্ত সংস্থা কোনো রুলই প্লে করছে না।
এক তদন্ত কর্মকর্তা যায়,
আরেক তদন্ত কর্মকর্তা আসে।
বার বার সময় নেয়াই যেন তদন্তের অংশ হয়ে গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে যারা ছিলেন,
তাদের একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি,
তারা কেস হিস্ট্রিই জানেন না।
তিনি বলেন, ডিবি তদন্ত শেষ করতে না পেরে আদালতে ক্ষমা চেয়েছে।
পরে র্যাব তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে।
তারা বার বার সময় চাচ্ছে।
কিন্তু তারা যে কিছু করতে পারছে না,
তাও বলছে না, ব্যর্থতার দায়ও নিচ্ছে না, তদন্তও শেষ হচ্ছে না।
দিনশেষে আমরা বিচার চাই।
আমরা চাই হত্যাকারীরা সনাক্ত হউক,
আইনের আওতায় আসুক, বিচার হউক।
এর বাইরে কিছু চাওয়া নেই।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়,
শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশিই।
চার দিন পর তদন্তভার যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)
গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি)।
তদন্তে ‘কিছু না পেয়ে’ ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে।
এরপর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দেয়।
তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
আদালত সূত্রে জানা গেছে,
তদন্ত সংস্থাগুলো এ পর্যন্ত ১০৫ বার সময় নিয়েছে।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা এ পর্যন্ত ১০টি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি’2025
পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে,
সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা
আলামতের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দুজন পুরুষের উপস্থিতি মিলেছে।
অজ্ঞাতপরিচয়ে সেই দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে
যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (আইএফএস)
ল্যাবে ডিএনএ পাঠিয়েছিল র্যাব।
ল্যাবের ফলাফল পাওয়া গেলেও তা থেকে জড়িতদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তের বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার
পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,
‘এখন পর্যন্ত প্রকৃত হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারিনি
এবং
হত্যার যে মোটিভ তাও বের করতে পারিনি।
এজন্যই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সময় লাগছে।’
ডিএনএ নমুনার ফলাফল বিষয়ে র্যাব মুখপাত্র বলেন,
‘যেসব আলামত পাঠানো হয়েছিল,
সেখান থেকে তারা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দিতে পারেনি।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
‘মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর আমরা যেসব আপডেট পেয়েছি,
তা বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেছি।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,
খুনি কে বা কারা এবং খুনের মোটিভ কি-তা নিশ্চিত না হলেও
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই জোড়া খুনে
এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
তারা হলেন– রুনির বন্ধু তানভীর রহমান,
বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির,
রফিকুল ইসলাম,
বকুল মিয়া,
মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু,
কামরুল হাসান অরুন,
পলাশ রুদ্র পাল,
তানভীর ও আবু সাঈদ।
Written
By
#Rafsan_Jani
senior repoter
daily kalbela