১৩৬
“ই-ভোটিং এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে!”মোস্তফা আমীর ফয়সল চেয়ারম্যান, জাকের পার্টি
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণের প্রস্তাবনা!
আমাদের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে মজবুত করতে স্বচ্ছতা, সমতা ও নিরপেক্ষতার
নীতিগুলোর সঠিকভাবে প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা আপনার কাছে নীচের কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরতে চাই:
1. ই-ভোটিং এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রবর্তন বাংলাদেশে প্রায় ৪০,০০০ ভোটকেন্দ্র
এবং ১২ লাখ স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য, যা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এর ফলে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তাই ই-ভোটিং এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন,
যা স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা রক্ষা করতে পারবে।
বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ এবং এনআইডি তথ্যের সাথে মুখমণ্ডল সনাক্তকরণের
(ফেসিয়াল রেকোগনিশন টেকনোলজি) মাধ্যমে ভোটাররা নিজ নিজ বাড়ি থেকেই ভোট দিতে পারবে।
এমন প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবে।
এতে ভোটারদের উপর কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার ও ভোট চুরি করা অসম্ভব হবে,
যা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রাথমিক শর্ত।
2. নির্বাচনী ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো সমতার সুযোগ নিশ্চিত করা,
যা প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য আর্থিক শক্তির ওপর নির্ভর না করে থাকা উচিত।
বিপুল অর্থব্যয় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে
এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে।
তাই আমরা একটি কঠোর বাজেট সীমা নির্ধারণের দাবি জানাই,
যা সকল প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলকে মেনে চলতে হবে।
এটি নিশ্চিত করবে যে নির্বাচনে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা করতে পারবে,
এবং অর্থবিত্তের প্রভাবে ভোটারদের মনোভাব বদলানো যাবে না।
3. মিডিয়া মনিটরিং কমিশন প্রতিষ্ঠা গণমাধ্যম জনগণের মতামত গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই আমরা একটি স্বাধীন মিডিয়া মনিটরিং কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি,
যা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মিডিয়া কভারেজে সমতা নিশ্চিত করবে।
কোনো দল তাদের আর্থিক সক্ষমতা বা সম্ভাব্য জয়লাভের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবে না।
মিডিয়া এমন একটি মঞ্চ হওয়া উচিত যেখানে জনগণ সকল দলের নীতিমালা
এবং কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
4. ভোটার প্রভাব ও পূর্ব নির্বাচনী ঘুষ প্রতিরোধ ভোটারদের প্রভাবিত করতে অর্থের ব্যবহার নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নষ্ট করে।
তাই, নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন, যা নির্বাচনের পূর্বে যেকোনো অবৈধ অর্থ বণ্টনকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
নির্বাচনী শুদ্ধতা রক্ষা করতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
5. রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহের অরাজনৈতিককরণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা বজায় রাখতে পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, সামরিক বাহিনী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে জনমনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা নষ্ট হবে।
তাই আমরা কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি, যা নিশ্চিত করবে যে এসব প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
6. রাজনৈতিক দল সংস্কার আইন প্রণয়ন রাজনৈতিক দলসমূহের আচার-আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে একটি নতুন “রাজনৈতিক দল সংস্কার আইন” প্রণয়ন করা জরুরি,
যা সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রাখতে বাধ্য করবে।
এই আইনের অধীনে, হেইট স্পিচ, ফ্যাসিজম ও ধর্মীয় উগ্রপন্থার প্রচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
একইসাথে, রাজনৈতিক বক্তৃতার ধরনও নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত, যাতে কোনো জাতি, ধর্ম, বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া না হয়।
আমাদের দেশে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে,
যা পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রাখবে। নির্বাচন কমিশনকে এসব নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষ, হুমকি বা বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
7. ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর রাজনৈতিক অনুদান নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক দলসমূহকে ব্যবসায়িক গ্রুপ বা বৃহৎ কর্পোরেশনসমূহের অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা উচিত।
এই অনুদানগুলো অনেক সময় নির্বাচনের পর সরকারী টেন্ডার বা বিশেষ কর ছাড় এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ হিসেবে দেওয়া হয়।
এটি প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের নীতিমালা লঙ্ঘন করে। এই প্রবণতাকে প্রতিহত করতে একটি স্বচ্ছ কাঠামো প্রয়োজন, যাতে কোনো প্রকার আর্থিক প্রভাবের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমর্থন পরিবর্তন বা প্রভাবিত করা না হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সমতাভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। জাকের পার্টি যেকোনো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে!
মোস্তফা আমীর ফয়সল
চেয়ারম্যান,
জাকের পার্টি।