৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

তৃতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির!

কর্তৃক Raju Ahmed Boni

জামায়াত-শিবিরের অঙ্গসংগঠনগুলো :

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সব অঙ্গসংগঠনকে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ‘সব অঙ্গসংগঠন’ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হলেও আদতে সেগুলো কী, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ২২তম সংস্করণে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। তবে জামায়াতের ‘সংগঠন পদ্ধতি’-তে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে কীভাবে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, দলীয় রাজনীতির প্রসার ঘটাতে হবে— তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘সংগঠন পদ্ধতি’র পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণে পেশাজীবীদের মধ্যে কাজের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ’, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ’, ‘বার লাইব্রেরিতে যোগাযোগ’, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ’ উল্লেখযোগ্য।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে পরিচালিত  সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। খোঁজ-খবর নিয়ে যাচাই-বাছাই করার পর সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট)  রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘অঙ্গসংগঠনের নামগুলো প্রকাশ করা হবে,  এটা গেজেট হবে।’

কবে নাগাদ হতে পারে গেজেট, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারবেন।’ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা নিয়ে কাজ চলমান। তিনি অগ্রগতি জেনে জানাবেন।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সব সেক্টরভিত্তিক জামায়াতের অনুসারী, সমর্থক, নেতাকর্মীদের সংগঠন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনও রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। ২০০১ সালে শ্রম অধিদফতরে রেজিস্ট্রেশন পায় এই ফেডারেশন। নেতাকর্মীরা জানান, অন্তত সাত-আটটি শ্রমিক সংগঠন, যাদের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে সেই সংগঠনগুলোও এই ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত। শ্রম অধিদফতরে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নাম উল্লেখ রয়েছে। তিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের পদে রয়েছেন। বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগের মামলায় তিনি কারাগারে।

তবে সংগঠনসূত্র জানায়, বর্তমানে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম। তিনি জামায়াতের নায়েবে আমির হিসেবে আছেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান (ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি)।

দেশের কৃষকদের মধ্যে মতাদর্শিক কার্যক্রম করতে সত্তরের দশকের শেষ দিকে গঠিত হয় বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেফতার হয়ে ২০১৪ সালে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি।

জামায়াতের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘এই সংগঠনটি দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি অগ্রগতির পদ্ধতি, বিশেষ করে দরিদ্র ও ভূমিহীন চাষিদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে।’

কৃষকদের নিয়ে জামায়াত অনুসারীদের ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ ও ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড’ কাজ করে থাকে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়।

‘সরকারি নিয়ম নীতি মেনে মসজিদ বা মাদ্রাসা, অজুখানা নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, গরিব মহিলাদের মধ্যে ছাগল ও মুরগির বাচ্চা, সেলাই মেশিন বিতরণ, শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, মধু চাষ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি চ্যারিটি কাজের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতের ওয়েবসাইটে।

জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল। সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। তিনি চাকসুর সাবেক ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট বলে জানা গেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে জামায়াতের নতুন দল ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র আত্মপ্রকাশের সময় দলের আহ্বায়ক হিসেবে তার নাম আলোচনায় ছিল।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অ্যাভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ‘ল-ইয়ার্স’ কাউন্সিলের সেক্রেটারি। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি  অ্যাডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হিসেবে আছেন।

প্রকাশনার জগতে জামায়াত নেতাদের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের (বিপিএল) । কোম্পানির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রব। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ নুরুল আমিন। ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসাইন, তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য । গত ২০ জুলাই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের এটিএম সিরাজুল হক, মো. শাহজাহান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান, বোরহান উদ্দিন, মাওলানা মুনির আহমদ খান, আব্দুল আউয়াল, আবু হুজাইফা জামায়াতের অনুসারী বলে জানা গেছে।

গঠনতান্ত্রিক নিয়মে ‘দাওয়াতি, সমাজকল্যাণমূলক, তারবিয়াত, রাজনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবামূলক, শ্রমিক কল্যাণমূলক, সাংস্কৃতিক, কৃষি উন্নয়নমূলক, যুব ও ক্রীড়া, আইন ও মানবাধিকার, তথ্য ও গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাহিত্য সংস্কৃতি’ ইত্যাদি কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়েছে জামায়াত। নেতাকর্মী ও অনুসারীরা বলছেন— এসব বিষয়ে কয়েক শতাধিক সংগঠন রয়েছে জামায়াত-শিবিরের।২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘সংগঠন পদ্ধতি’র পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণে ‘সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা’ শীর্ষক  তৃতীয় দফা কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সমাজের বেশিরভাগ লোক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। চাষি, শ্রমিক, দোকান, কর্মচারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী প্রভৃতি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত লোকদের বিভিন্নমুখী সুবিধা-অসুবিধা ও প্রয়োজন থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পেশাগত স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশার লোকদের সমিতি গড়ে উঠে। এসব পেশাভিত্তিক সমিতি ও সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ ও সামাজিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো যায়।’

জামায়াতপন্থি একাধিক সাংবাদিক জানান, সাংবাদিকদের মধ্যে যারা জামায়াত-শিবিরে যুক্ত, অনুসারীদের বড় একটি অংশ বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের সঙ্গে সমন্বিত সংগঠনে সক্রিয়। বিএনপি-জামায়াতপন্থি একটি নিবন্ধিত সাংবাদিক ফোরামের সদস্য জানান, ‘জামায়াতের সঙ্গে যারা যুক্ত, এমন সাংবাদিকদের আলাদা সংগঠন নেই।’

জামায়াত সম্পর্কে অবগত একটি দলের কেন্দ্রীয় নেতা জানান, প্রকৌশলীদের মধ্যে এখনও সক্রিয় সংগঠন গঠন করতে না পারলেও দলীয় চিকিৎসকদের নিয়ে ‘ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে।

সারা দেশের মসজিদভিত্তিক জামায়াতের দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে ‘বাংলাদেশ মসজিদ মিশন’। ১৯৭৩ সালের ২৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই সংস্থাটির সমাজ কল্যাণ রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ঢ-০৪০৯ এবং এনজিও রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ৬৫৬। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আছেন তামিরুল মিল্লাতের অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ যাইনুল আবেদীন। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এই সংস্থার সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী।

ড. মাদানী বাংলাদেশ বেতার, বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভিতে ‘ইসলাম ও জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ে’ আলোচনা করে থাকেন। মাওলানা মাদানী জামায়াতের সক্রিয় নেতা, কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে দলীয় যোগাযোগে নেতৃত্ব দেন তিনি।

জামায়াতের সিলেট জেলা শুরা সদস্য নজমুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতের গঠনতন্ত্রে অঙ্গ সংগঠন বলে কিছু নেই। ছাত্রশিবির স্বাধীন সংগঠন হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া কোনও অঙ্গ সংগঠন নামে জামায়াতে কিছু নেই।’

‘নিষিদ্ধ হলেও আপাতত তালিম, তারবিয়াহ, দাওয়াত, সমাজ সংস্কারমূলক কাজে থাকবে জামায়াত’ উল্লেখ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র উন্মুক্ত। আমাদের সব সেক্টরে কাজ আছে। যেসব সংগঠন পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে, সেগুলো সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত, রেজিস্ট্রিকৃত।’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শনের প্রচার করে থাকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। জামায়াতের একাধিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানান, ১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ১১ জন নারী শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু।

জামায়াতের ঢাকা মহানগরের একজন অনুসারীর দাবি, ‘কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হিসাবে ডা. তাহসিনা ফাতিমা ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মুনজিয়া নামে দুজন নারীর নাম তিনি শুনেছেন।’

ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ছাত্রীসংস্থার কার্যক্রম অনেক প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছে। তবে ‘ক্যাডারভিত্তিক’ কার্যক্রম করার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারা গোপনে তৎপরতা চালায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নারী হলগুলোতে মসজিদভিত্তিক কার্যক্রমও রয়েছে সংস্থাটির।

জামায়াতের আদর্শ দেশের শিশু-কিশোরদের মনে ছড়িয়ে দিতে ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে  কিশোরকণ্ঠ। ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয় এই মাসিক পত্রিকাটি। পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০২ সালে সরকারি রেজিস্ট্রিভুক্ত হয় কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন। পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। তবে পত্রিকাটির অফিসিয়াল নাম হয়ে যায় “নতুন কিশোরকণ্ঠ”।

কিশোরকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (১৯৮৪-১৯৮৫), তিনি জামায়াতের অন্যতম নায়েবে আমির ও বর্তমানে কারাগারে আটক। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পত্রিকাটি পরিচালিত হচ্ছে পুরানা পল্টন থেকে। জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ (২০০৩-২০০৯, জানুয়ারি পর্যন্ত) সম্পাদক ছিলেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন মোশাররফ হোসেন খান নামে এক ব্যক্তি। তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার সুযোগ হয়নি।

কিশোরকণ্ঠ মূলত কয়েকটি ধাপে কার্যক্রম করে থাকে। প্রথমেই শিশু-কিশোরদের লেখা প্রকাশ করা, দলীয় মতাদর্শিক কবি, সাহিত্যিকদের লেখা পাঠ করানো। তারা নিয়মিত সাহিত্য আসর করে। এরপর পাঠক ফোরামে যুক্ত করানো হয় শিশু-কিশোরদের। আর কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ফ্রি কোচিং কাস, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং বৃক্ষরোপণ ও স্কুল আঙিনা পরিষ্কার অভিযান, জেএসসি, জেডিসি ও এসএসসি-দাখিল জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের কৃতী, মেধাবী সংবর্ধনা, আন্তঃস্কুল ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচি,  সাধারণ জ্ঞানের আসর, কুইজ, বিতর্ক, গল্প লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতা করা হয়।

কিশোরকণ্ঠে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসবকে সামনে রেখে শিক্ষা সফর, সামষ্টিক ভোজ, পাঠচক্র ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে থাকে। বর্তমানে পত্রিকাটির প্রচার সংখ্যা লক্ষাধিক, বলে দাবি করেন জামায়াতের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।

জামায়াত-শিবিরের সাংস্কৃতিক জগতে পরিকল্পিত কার্যক্রম রয়েছে। বিএনপি-জোট সরকারের সময় সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী পরিচিত সংগঠন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সদ্য নিষিদ্ধ এই রাজনৈতিক সংগঠনের সাংস্কৃতিক উইংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে ‘সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)। দলীয় ‘সাংস্কৃতিক কার্যক্রম’ ও সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা দলীয় অনুসারীদের তৈরি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করতে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)।

সসাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সারা দেশে সুস্থ দেশীয় ও মূল্যবোধের সংস্কৃতি বিকাশে পূর্ব থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একটি ছাতার নিচে সমন্বয় করতে জাতির আশার প্রতীক হিসেবে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)।’ঢাকা মহানগর জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, সৃজন চিন্তন, মৃত্তিকা একাডেমী, প্রতিভা ফাউন্ডেশন, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, বিপরীত উচ্চারণ, পল্টন সাহিত্য পরিষদ, ফররুখ পরিষদ, চত্বর সাহিত্য পরিষদ, কিশোর কলম সাহিত্য পরিষদ, ফুলকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ, নতুন কলম সাহিত্য পরিষদ, আল হেরা সাহিত্য পরিষদ, মাস্তুল সাহিত্য সংসদ, সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ, স্পন্দন সাহিত্য পরিষদ, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য সংসদ, কানামাছি সাহিত্য পরিষদ, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ, শীলন সাহিত্য একাডেমী, পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, সংগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, উচ্ছ্বাস সাহিত্য সংসদ, ইসলামী সাহিত্য পরিষদ, হিলফুল ফুজুল, মওদুদী রিসার্চ সংসদ, বাংলাদেশ সাহিত্য কেন্দ্র নামে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী নামে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যনির্ভর সংগঠন রয়েছে।

জামায়াত-শিবির ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধের বিষয়ে জানতে চেয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি। পরে শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন, নিজের নাম ও পরিচয় উদ্ধৃত না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের অঙ্গ সংগঠন তো অনেক দূরের বিষয়। যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে নির্বাহী আদেশে সেটি অবৈধ, অসাংবিধানিক। দেশে-বিদেশে মানুষের কাছে ছবি, ভিডিও আছে, কারা সহিংসতা করেছে, দেখেছে। নিষিদ্ধ হলে তো হবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো।’

‘জামায়াত আমির যেটি বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে কীভাবে নির্বাহী আদেশে একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়। সেখানে তো এসব নিষিদ্ধের কোনও সুযোগ নেই। মূলত সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেভাবে ছাত্র, জনতার উপর হামলা করেছে, সারা দেশে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে দৃষ্টি সরাতে এটি করেছে। দলীয় ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেছে, দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে তারা এই কৌশল অবলম্বন করেছে।’ বলেন এই জামায়াত নেতা।

প্রসঙ্গত, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাগপা (একাংশ), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন।

written by-

salman taruqe shakil,

speacial corrospondent , Bangla Tribune

আস্থা লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেড" (গাংনী শাখা, মেহেরপুর।) Hotline --01532232681

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.