৫৭
ভারতীয় হাইকমিশনের জাতীয় পার্টি
১ ডিসেম্বর ২০১৩। দুপুরে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় ফোনে জানালেন, এরশাদ সাহেব ডেকেছেন।
বিকেলে বারিধারায় গিয়ে দেখি শুধু আমাকে নয় প্রথম আলোর সেলিম জাহিদ ভাই, ইত্তেফাকের শামসুদ্দিন ভাই, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শফিকুল ইসলাম সোহাগকে ডেকেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ আলাপে এরশাদ সাহেব বললেন, বিএনপি জামায়াতের অবরোধে চারদিকে আগুন। নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
সব সাংবাদিক সব নেমে আসার পর আমি আবার যাই এরশাদ সাহেবের কাছে। জিজ্ঞাসা করলাম, নির্বাচনে যাবেন? তিনি জোরের সঙ্গে বললেন, নির্বাচনই হবে না। ফিরে লিখেছিলাম, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার পথ খুঁজছেন এরশাদ।
দু’দিন পর এরশাদ সাহেব সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন না। এরপর গায়েব হয়ে গেলেন। প্রয়াত সম্পাদক সারওয়ার ভাই অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন যেভাবেই হোক এরশাদ সাহেবকে খুঁজে বের করতে হবে। শীতের সন্ধ্যায় গুলশানে গেলাম জাপার এক জ্যেষ্ঠ নেতারা বাসায়। পুলিশ ঢুকতে দেয় না। সেই নেতাকে দুলাভাই পরিচয় দিয়ে ঢুকে গেলাম।
দোতলায় গিয়ে দেখি নেতা বসে আছেন। আমাকে দেখে চমকে বললেন, ‘কেনো এসেছিস?’ এর মধ্যেই এলেন, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং আরও দুই অপরিচিত ভদ্রলোক। পরে জানালাম তাঁদের একজন ডিজি ডিজিএফআই জেনারেল আকবর এবং অপরজন ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা (যতদূর মনে পড়ে নাম তাঁর সুব্রত কুমার রায়)। তিনি আঙ্গুল উঁচিয়ে পরিস্কার বাংলায় জাতীয় পার্টির নেতাকে বললেন, ‘উনাকে (এরশাদ) নাটক বন্ধ করতে বলুন। সামনে আসতে বলুন। নয়ত রাজনীতিতে মাটিতে মিশিয়ে দেবো।’ আমি দরজায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ শুনছিলাম।
এ সময় জাপার নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রবেশ করলেন। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছ?’ হুট করে তোফায়েল সাহেবকে বললেন, ‘এটা আমার ছোট ভাই রাজীব। ভালো সাংবাদিক।’ শুনেই তোফায়েল সাহেবের হুঙ্কার , ‘সাংবাদিক হয়ে থাকতে পারো রাজনৈতিক বৈঠকে?’ শুনে আমার কলিজায় পানি না। বাঁচালেন সেই জাপা নেতা। বললেন, ‘লিডার ও আমার আত্মীয়। এমনি এসেছে।’ আমি পড়িমড়ি করে বের হয়ে, মোটরসাইকেলে একটানে চলে এলাম অফিসে।
পরের ঘটনা সবার জানা। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এলেন। এরশাদ সাহেবও অজ্ঞাতস্থান থেকে ২৭ ঘন্টা পর ফিরলেন। সুজাতা সিংহের সঙ্গে বৈঠক করলেন। জানালেন, নিবার্চনে অংশ নিতে ভারতীয় চাপ রয়েছে।
তারপর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার সবাই নির্বাচনে অংশ নিলেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে শুধুমাত্র এরশাদ, জি এম কাদের, লালমনিরহাটারের মুজিবুল হক, মানিকগঞ্জের সৈয়দ মান্নান, রংপুরের আনিসুল ইসলাম মন্ডল নির্বাচন বর্জন করেন। ১৩ কিংবা ১৪ ডিসেম্বর রাতে সোনারগাঁও হোটেলের পাঁচতলায় বসে কীভাবে টিক দিয়ে এমপি বানানো হয়েছে, আমি এর সাক্ষী। সেখানে ছিলেন জাপার নেতা এবং এস আলমের বেয়াই সোলায়মান আলম শেঠ। তিনি সে সময়ে সোনারগাঁও হোটেলের পরিচালক ছিলেন। আরও দুইজন ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাঁদের তিনজনের কেউ এমপি হতে পারেননি।
৫ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনে জাপার জন ২২ বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। যাদের অনেকে মেম্বার হবার উপযুক্ত ছিলেন না। পরবর্তীতে এরশাদও উল্টে গিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নেন। দলটির আজকের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিমন্ত্রী হন। একেই সঙ্গে বিরোধীদল আবার সরকারে! নজিরবিহীন এ কান্ডের পরও তারা এখন প্রশ্ন করছেন, আমাদের কী অপরাধ?
২০১৮ সালের নির্বাচন আরেক ইতিহাস। জাপাকে ২৬ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। বগুড়া-৬ ও ৭, সিলেট-২ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বাদে বাকি সব আসনে ‘জয়ী হয়’। বিএনপির ঘাটিঁ ফেনী-৩ আসনে জাপার জেনারেল মাসুদ ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন! সেবার জাপার ২২ এমপির ১৮ জন ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পান! যার অধিকাংশ আগের রাতে পাওয়া।
গত ১১ বছরে জাপা শুধুমাত্র ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার উপনির্বাচনে এবং ২০২৩ সালে ঠাঁকুরগাওয়ের উপনির্বাচনে মোটামুটি স্বচ্ছ ভোটে জয়ী হয়েছে। বাকি সব জালজালিয়াতি কিংবা আওয়ামী লীগের দয়ায় পাওয়া।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আসলেই সরকারের নানা কাজের সমালোচনায় মুখর ছিলেন জি এম কাদের। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জাপা প্রকাশ্যে বলছিল, অংশগ্রহণমূলক না হলে ভোটে যাবে না। তবে তা মুখের কথা ছিল, মনের নয়।
২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেন জি এম কাদের। দলটির এক নেতা হালকা নেশার ঘোরে আমাকে বলে দেন, বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। তিনিই জানান, জি এম কাদের সাহেব হাইকমিশনারকে নিশ্চিয়তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে তাঁর দল। এ ছাড়া পথ নেই।
যাই হোক, আমি নিউজ করে দিলাম। পরেরদিন শুরু হলো, জাপার প্রতিবাদ, আইনী ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি। তবে সমকাল অনড় রইল। ১৬ নভেম্বর সূত্র এবং সবপক্ষের বরাতে সমকালে আবার লিখলাম, যতই হম্মিতম্বি করুক নির্বাচনে যাবে জাপা। আর এসব হম্বিতম্বির কারণ, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বাড়তি কিছু আসন আদায় করা এবং বিরোধীদল হওয়া।
২০২৪ সালে জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগ প্ল্যান বি। প্রথমে চেষ্টা হয়েছিল, বিএনপিকে ভাঙ্গার। বিএনপি থেকে শ দুইয়েক এমপি হওয়ার মতো নেতাকে ভাগিয়ে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল, এই দুই দলের জোটকে পরবর্তী সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানো। শমসের মবিন চৌধুরীকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। ডিজিএফআই, এনএসআই বিএনপি নেতাদের তৃণমূল বা বিএনএমে নিতে চাপ লোভ ভয় সবই দেখিয়েছিল, কাজ হয়নি। শাহজাহান ওমরসহ সাত আটজন নির্বাচনে যান নানা ব্যানারে। বিএনপির সবচেয়ে বড় সফলতা, দল কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে কী না এ অনিশ্চয়তার মধ্যেও নেতারা আনুগত্য এবং আদর্শের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বিএনপিকে ভাঙা যাবে আশায়, সেই সময়ে জাপা, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি, তরিকতের মতো দলগুলোকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। সমকালে সে সময়ে এসব ঘটনার খবর বিস্তারিত লিখেছি।
চেষ্টা হয়েছিল, নিবন্ধনহীন জামায়াতের নেতাদের অন্য দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে। এ জন্যই ২৮ অক্টোবর বিনাবাধায় সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই চেষ্টার মূল ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বিএনপির মতো জামায়াতকেও ভাঙতে ব্যর্থ হয় আওয়ামী লীগ।
উপায়অন্ত না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জাপার দিকে হাত বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এর আগেই জাপা ভারতীয় হাইকমিশনকে দিয়ে চেষ্টা করছিল, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বেশি সংখ্যক আসন আদায়ের। নভেম্বরের ২২ অথবা ২৩ তারিখ রাতে রওশনের বাসায় জি এম কাদেরের বৈঠকে দূতাবাসের কর্মকর্তা রাজেশ অগ্নিহোত্রিও ছিলেন। ছিলেন সেই সময়কার ডিজি এনএসআই।
ভারতের মাধ্যমে জি এম কাদের আওয়ামী লীগকে রাজি করান, রওশন নয়, তাঁর সঙ্গে ডিল করতে হবে। তাঁকে বিরোধীদলীয় নেতা বানাতে হবে। নিশ্চয়তার পাওয়ার পর জাপা প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দেওয়া শুরু করে।
৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সেদিনই নিশ্চিত হয়ে যায়, রওশন এবং তাঁর অনুসারীরা নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছেন। কারণ, তাঁরা কেউ দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও রওশনের খেলা শেষ। সে কারণেই ২২ নভেম্বর থেকে বারবার চেষ্টা করেও শেখ হাসিনার দেখা পাননি রওশন। তাঁকে ২০১৪ সালে ব্যবহার করলেও, ভারতের মাধ্যমে সমঝোতার কারণে ২০২৪ সালে টিস্যুর মতো ছুড়ে ফেলেন হাসিনা। রওশন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পান ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্রের জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর।
জি এম কাদের বারবার দাবি করছেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে জাপাকে জোর করে নেওয়া হয়েছে। তিনি অংশ না নিলে, ২০১৪ সালের মতো রওশনের নেতৃত্বে জাপাকে নির্বাচনে নেওয়া হতো। এ দাবি মিথ্যা। কারণ, ৩০ নভেম্বরেই কনফার্ম হয়ে গিয়েছিল রওশনরা নির্বাচনে নেই। তা জি এম কাদেরের সঙ্গে সমঝোতাতেই আওয়ামী লীগ করেছিল।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। জি এম কাদের চাইলে, সেদিন এক স্বাক্ষরে আর এক চিঠিতে সব প্রার্থী প্রত্যাহার করতে পারতেন। তা করেননি। সুতরাং জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার দাবি সত্য নয়।
প্রায় এক সপ্তাহ দফায় দফায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বাটোয়ার বৈঠকের পর, ১৬ ডিসেম্বর রাতে গুলশানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসায় জাপার জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে আমি এবং ইত্তেফাকের শামসুদ্দিন ভাই ছিলাম। রাত ১০টার দিকে খবর আসে, আওয়ামী লীগ ২৬টির বেশি আসন ছাড়বে না। ঢাকায় আসন দেবে না। অর্থাৎ জি এম কাদেরের স্ত্রী ঢাকায় আসন পাচ্ছেন না। সেই রাতে গুলশান থেকে বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসে গিয়েছিলেন জি এম কাদের।
১৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ আসন ছাড়ার যে তালিকা করেছিল, তাতে ছিলেন জাপার পটুয়াখালীর এক সাবেক এমপির। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিশ্চিত করতে, নিজ এলাকার একটি সড়কের নাম গত বছরের আগস্টে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধণ শ্রিংলার নামে নামকরণ করেন। এমন ছ্যাচড়ামি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কখনো হয়নি। যাই হোক, এ ছ্যাচড়ামির কারণে সেই নেতা ১৬ ডিসেম্বর রাতে তাঁর আসনটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন শ্রিংলাকে ব্যবহার করে।
পরের দিনও জাপার বনানী কার্যালয়ে ছিলাম আমি। জি এম কাদেরের এ দাবি সত্য, সেদিন তাঁকে ঘিরে ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে তাদের দেনদরবার হচ্ছিল শেরিফা কাদেরের আসনের জন্য। বিকেল তিনটার দিকে হঠাৎ জাপা কার্যালয়ের সামনে স্লোগান উঠে, ‘শেরিফা কাদের, ঢাকা-১৮’। এর দুই তিন মিনিট পর ভেতর থেকে ঘোষণা আসে, জাপা নির্বাচনে থাকছে। বাদ পড়ে যান সিলেটের আতিক। সুতরাং জাপাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে, এ দাবি সত্য নয়।
জাপা ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে ২৬ আসনে ছাড় পেয়েও ১১ আসন পেয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সমকালে লিখেছিলাম জাপাকে ১২ আসন দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো নিজ যোগ্যতায় জিততে হবে। জাপা তা পারেনি। অবশ্য, পারার কারণও নেই। আসলে জাতীয় পার্টির কোনো আসনেই এককভাবে জেতার ক্ষমতা নেই। সংগঠন ভোট কিছুই নেই। রংপুরেও দল এখন পঞ্চম শক্তি।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে স্নেহ করেন সন্দেহ নেই। তেমনি সন্দেহ নেই, অভ্যুত্থানের সফলতার জন্য উদগ্রিব ছিলেন তিনি। কথাবার্তায় আমি নিশ্চিত ছিলাম, কাদের ভাই আওয়ামী লীগের পতন চান। আদর্শিক কারণে নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ের অপমানের কারণে তিনি শেখ হাসিনার উপর তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন।
২০১৪ সাল থেকে জাপা রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে এমপি বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগে প্রতিযোগিতা বেশি, আবার টাকাও লাগে বেশি, তাই সুযোগসন্ধানীরা ভর করত জাপাতে। কম টাকায় জাপার কোটায় এমপি হওয়া ছিল মূল ধান্ধা। এ কায়দায় রওশন আরা, সেলিম ওসমান, জেনারেল মাসুদ, ফজলুসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন এমপি বনে যান। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহের এক নেতা নৌকা না পেয়ে জাপার কোটায় ভারতীয় দূতবাসের মাধ্যমের এমপি হওয়ার চেষ্টা করেন। ৩০ কোটি টাকা লাগবে শুনে কেটে পড়েন।
জাপা নেতারা নিশ্চিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আজীবন থাকবে। তাই জাপার এমপি হয়েও দালালি করত শেখ হাসিনার। তারা ভাবতেও পারত না, কখনো অভ্যুত্থান হতে পারে। তাই জি এম কাদেরের চেয়ে হাসিনার প্রতি বেশি অনুগত ছিল। সংসদে যেতে হলে, আওয়ামী লীগ ছাড়া পথ নেই, এ সমীকরণ থেকে জাপা যখন যেভাবে পেরেছেন দূতাবাসকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের উচ্ছিষ্টে ভাগ বসিয়েছে।একজন তো গত বছরের নভেম্বরে বলেছিলেন, ভোট সংগঠন না থাকার পরও জাপা টিকে আছে কয়েকজন এমপি থাকায়। সংসদে না থাকলে জাপা মরে যাবে।
জাপাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভারতপন্থি দল। একটা উদাহরণে তা স্পষ্ট হবে। ২০১৯ সালে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলকে বাংলাদেশের অধিকাংশ দল নিন্দা করেছে। কোনো দল প্রকাশ্যে সমর্থন করেনি। আওয়ামী লীগও নয়। কিন্তু একমাত্র জাপা বিবৃতি দিয়ে ভারতের কাশ্মির নীতির সমর্থন করে।
জাপার এই অতি ভারতপ্রীতি ছিল শেখ হাসিনার অস্বস্তির কারণ । তাই যতভাবে সম্ভব জি এম কাদেরকে অপদস্ত নাজেহাল করেছেন। হয়ত এই একটি মাত্র কারণেই জি এম কাদের মনে প্রাণে শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিলেন এটা যেমন সত্য, আবার জাপা আওয়ামী লীগের দোসর ছিল এটাও সত্য। তবে এর জন্য দলটির কার্যালয়ে হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।