২৪৮
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ যা সূফীবাদের আধ্যাত্নিক রাজধানী।
সেখানে দিবা-নিশি আধ্যাত্নিকতা চর্চা করা হয়।
সেই সাথে পারিবারিক, সামাজিক তথা নিজকে চিনার ও জানার জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়।
এই বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফের মহামহিম প্রতিষ্ঠাতা
বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) কেবলাজান ছাহেব।
সেই ৬০’র দশকে স্থানীয় ও জেলা পযার্য়ে অালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন।
৭০’র দশকে তিঁনি জাতীয় সকল পত্র-পত্রিকা,
রাজনীতি তথা স্রষ্টা প্রেমিকদের কাছে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
৮০’র দশকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তজার্তিক মহলে,
আন্তজার্তিক খ্যাতনামা পত্রিকাসহ সারা পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষের কাছে
আধ্যাত্নিক নেতা হিসাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ)
ছাহেবের তথা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার নারী-পুরুষ- শিশু বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আশ্রায় গ্রহন করছিলো।
মহান মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে রাত্রীযাপন করে খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম করে বিশ্বওলী হযরত পীর কেবলাজানের দোয়া নিয়ে ফরিদপুর থেকে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ভারত গমন করতেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশুদের খাবারের দুধ গরম করবার জন্য ৪০ খানা চুলা সর্বক্ষন জ্বালানো থাকতো।
১৯৭৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে পরবর্তী এক বছর দেশের
অস্থিতিশীর রাজনীতি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ভূমিকা সম্পর্কে
“The Holiday” পত্রিকায় শিরোনাম করে লিখা হয়,
“The new development in Bangladesh politics is consequent
upon the parley between President Sattar and
Chief of The Army Staff Lt. Gen. H.M. Ershed held on December 3
At Atroshi The Mecca of Bangladesh politics for some days”.
তারপর আসা যাক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ব্যাপারে।
এদেশের প্রতিটি মুসলামের অন্তরের আশা-আকাংখা ছিলো
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম।
আজ আপনি বা আমি সুজন শাহজী সহ যত সুন্নী, তাবলিগি, কওমী সহ
যত মুসলমান গর্ব করে বলতে পারি আমাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম
তার পিছনে সব চেয়ে বড় ভুমিকা রাখেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের
পীর ছাহেব হযরত বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব।
তৎকালীন সেনা শাশিত সরকারে সেনা বাহিনিতে
তিঁনার ভূমিকা নিয়ে ফার ইষ্টার্ন ইকোনমিক রিভিয়্যুরতে পত্রিকায় শিরোনাম হয়,
“Shah Sufi Faridpuri, a Highly popular muslim saint disagrees
with His military devotees on power sharing”
৮ম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম কে ইসলাম করা হয়।
৮ম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলাম গৃহিত হবার পর
তৎকালিন রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার বক্তব্যে বলেন,
“আমি আমার মুর্শিদ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর হযরত ফরিদপুরী কেবলাজানের
শিক্ষাই এই পদক্ষেপের অনুপ্রেরনার উৎস হিসাবে নিয়েছি।
তিঁনার ই কারনে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম।”
এই বিল মহান সংসদে পাশ হবার পরদিন রাষ্ট্রপতি এরশাদ
এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা মওদুদ আহমদ
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গমন করে
হযরত পীর কেবলাজানের কদমে তাঁদের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের অপরিসীম ভুমিকায় ৮ম সংশোধনী বিল দ্বারা
ইসলামই কেবল রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি পায় নি।
একই সঙ্গে এই বিলে অন্যান্য সকল ধর্ম প্রচার ও পালনের অধিকারও স্বীকৃতি পেয়েছে।
৮ম সংশোধনী বিল এদেশের ভাষাভিত্তিক
জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের সমস্ত উদ্দেশ্য ভেস্তে দিয়ে দিয়েছে।
সূফী ইসলামের তাৎপর্য এই যে,
আর্দশকে ভিত্তি করেই ইসলামের সাবর্জনীন আদর্শ বৃহত্তর
জনগোষ্ঠির ঐক্যের যেমন ভিত্তি হবে তেমনী স্বাধীন জাতিসত্তার ধারা সৃষ্টি করে
এদেশের ইতিহাসে অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফের
মহামহিম প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) কেবলাজান ছাহেব।
৮ম সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফে শোকরানা মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
তখন বাংলাদেশের খ্যাতনামা পত্রিকা গুলোতে শিরোনাম করা হয় এভাবে,
“৯ কোটি মুসলামানের আশা পূরন হয়েছে- আটরশির পীর ছাহেব”
দৈনিক ইনকিলাব ২০ জুন, ১৯৮৮
দৈনিক বাংলা ২০ জুন’ ১৯৮৮ সালের তাদের পত্রিকার অার্টিকেলে লিখেন,
“বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহসূফী ফরিদপুরী (মাঃজিঃআঃ)
ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষনায় আল্লাহতায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন,
“ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম পালন
ও তাদের আর্থ-সামাজিক অধিকার ভোগের ব্যবস্থা ইসলামের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রকে করতে হবে।
পীর ছাহেব সম্প্রতি এক নসিহতে বলেন, ইসলাম অাল্লাহতায়ালার মনোনীত ধর্ম।
এই ধর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দেশের নয় কোটি মুসলমানের ঈমানের বিজয় হয়েছে।
তিনি সংঘাতমুক্ত, শ্রেনী ভেদাভেদহীন সাম্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টির উপদেশ দিয়ে বলেন,
শুধু মুসলমানকে নয় সমগ্র মানবজাতিকে ভালবেসে আশরাফুল মাকলুকাত হবার সৌভাব অর্জন করতে হবে।
যারা এখনও রাষ্ট্র ধর্মের বিরোধীতা করছেন,
তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার আহবান জানিয়ে পীর ছাহেব বলেন,
“যারা আমাদের আত্নপরিচয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান মুসলমানগন তাদের মোকাবেলা করবে।”
তাই গর্ব করে বলতে পারি,
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল শুধু মাত্র পীর-মুরিদীর জন্য নয়।
এখানে মানুষ কে সত্যিকারে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়।
পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক বন্ধন,
রাষ্ট্রিয় সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়া হয় বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
সর্বশেষে বলতে পারি কঠিন মসিবতের যামানায়
“মান অারাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু”
চিনবার একমাত্র জায়গা বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফ।