সরকার দেশকে পুরোপুরি পরনির্ভরশীল করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বুধবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মতিনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের উৎপাদন করার চেয়ে আমদানি করার চাহিদা বেশি। দেশকে এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছে। দেশ এখন দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোনও দিক থেকে আমরা ভালো কিছু দেখছি না। দেশে ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনও বিচার হচ্ছে না। দেশে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার এখনও ঋণ করে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের রফতানি আয় এখন হুমকির মুখে। দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান করে মানুষের চাহিদা মেটানোর চেয়ে সরকারের গ্যাস আমদানি করার চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, ‘দেশে লোডশেডিং হচ্ছে, আর অপরদিকে ক্যাপাসিটির নামে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই লুটপাটের মাশুল দিতে হচ্ছে জনগণকে। সারা দুনিয়ায় তেলের দাম কমে গেলেও আমাদের দেশে তেলের দাম বেড়ে গেছে। দেশে বেকার সংখ্যা বেড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। দেশের গবেষকরা বলছেন, প্রতিবছর গরিবের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার মানে হলো প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়া। এই সরকার কোনও কিছুর পরোয়া করে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এদেশের সাধারণ মানুষ বড় কষ্টে আছে। আমাদের ১৬টি চিনিকল ছিল, এখন বর্তমানে মাত্র ৭টি টিকে আছে। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও তেমন ভালো নয়। আমরা আজকে নির্ভরশীল হয়ে গেছি। যারা দেশকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। ’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশে যদি ছাত্রআন্দোলন থাকতো, তাহলে হয়তো এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারতো না। এই সরকার খুব একটা সুখে নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচন আরও খারাপ হয়েছে। দেশে রিজার্ভ কমে গেছে। বাংলাদেশের সরকার ক্ষমতায নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছে। আমাদেরকে একটা কার্যকর ঐক্য তৈরি করে আন্দোলনে নামতে হবে।’
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা একটা জায়গায় আটকে গেছি। ছাত্র, যুব ,কৃষক রাজনীতিতে কে কোন পোস্ট নেবো— এটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয়, ছাত্ররা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে, শ্রমিকরা বস্তিতে, আর কৃষকরা কুঠরিতে থাকতে পারতাম, তাহলে আমাদের আন্দোলনটা অনেক আগেই সফল হতো। আন্দোলন করতে চাচ্ছি, ঘরের মধ্যে অথবা পালিয়ে থেকে। আন্দোলন করতে চাচ্ছি, ছোট ছোট রুমের মধ্যে বক্তৃতা করে। আমার মনে হয়, আমরা তখনই সফল হবো, একে অপরের দোষারোপ না করলে।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল প্রমুখ।